[ জানি না শেষ পর্যন্ত এই গল্পটাও প্রেমের গল্প হয়ে যাবে কিনা। ইচ্ছে আছে একটু বড় করে লেখার ]
এক
ঘুম থেকে উঠে শাহিন ভাবছে যে আজ সে কি কি করবে; প্রথমে নাস্তা করে বড় আপার বাসায় যেতে হবে, সেখান হতে একটু ঘুরাঘুরি করে তারপর আর কোন কাজ নেই। ও আর রাইহানের বাসায় যেতে হবে। বেকারদের আবার কি কাজ? আগে হলে হয়ত চাকরীর জন্য ছোটাছটি করত। কিন্তু ইদানিং তা আর করে না। সে বুঝে গেছে যে এ জীবনে আর চাকরী হবে না। তার তো মামা চাচা টাইপের কেউ নেই যে চাকরী নিয়ে বসে থাকবে!
শাহিনের বাবা সরকারী চাকরী করতেন, রিটায়ার্ড করেছেন। এখন বাসায় বসে থাকেন। মগবাজারে নিজেদের জমিতে তাদের তিনতলা বাসা। নিচতালা আর তিনতলা ভাড়া দেয়া, শাহিনেরা থাকে দোতালায়। বড় ভাই সজিব একটা চাকরী করেন। তাদের বাড়িতে সবসময় একটা অস্থিরভাব বিরাজ করে। যেন দেশে যুদ্ধ চলছে। শাহিনের বাবা আহমেদ সাহেব রিটায়ার্ড করার পর থেকে এটা আরও ভালভাবে শুরু হয়েছে।
-“শাহিন, নাস্তা খেতে আসো, নাস্তার পর বাবা তোমাকে তার রুমে যেতে বলেছেন”। বড় ভাবী ডেকে গেল শাহিনকে। ভাবীর নাম শাহানা। ভাবীর নামের সাথে শাহিনের নামের খুব মিল থাকায় প্রথম প্রথম সে খুব লজ্জা পেত। এখন অবশ্য পায় না। বাবা ডেকেছেন তার মানে আজকে পুরো দিন তাই খারাপ যাবে – ভাবছে শাহিন। বাবার সাথে কথা বলা মানে শুধু এক পক্ষের কথা শোনা আর ধমক খাওয়া।
-চাকরীর জন্য চেষ্টা করছ নাকি শুধু টইটই করে ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে? আহমেদ সাহেব শাহিনের না দিকে তাকিয়ে বললেন।
-হ্যাঁ বাবা চাকরীর চেষ্টা করছি। বলল সে। এমনিতে আহমেদ সাহেব সব ছেলেদেরকে তুই করে বলেন।কিন্তু যখন কারও কপালে খারাপি থাকে তাহলে তাকে তুমি করে বলেন। আজকে সেই বিশেষ দিন বলে মনে হচ্ছে শাহিনের কাছে। আবহাওয়া ভাল না তার ওপর মিথ্যা বলেছে যে চাকরীর চেষ্টা করছে সে। কি যে আছে কপালে আজকে!
-সজিব তো বলল যে তুমি আর চাকরীর চেষ্টা করছ না; চাকরী করবা না কেন? তোমার বাবা কি জমিদার নাকি যে তোমাকে বসে বসে খাওয়াবে ?
-না বাবা তেমন না। আসলে আমাকে কেউ চাকরী দিতে চায় না। আর এসব চাকরী বাকরি আমাকে দিয়ে হবে না, ব্যাবসা করব।
-ব্যাবসা করবা? টাকা কে দিবে? ওসব হবে না। সাজ্জাদ কে বলে আমি তোমার একটা চাকরী ঠিক করেছি। ওয়াচমান টাইপ চাকরী, শুধু পাহারা দিবা। তোমার জন্য তো ঠিকই আছে। কাল থেকে জয়েন করবা। টেবিলের ওপর ঠিকানা আছে নিয়ে যাও।
-জি আচ্ছা। বলে অনিচ্ছা সত্তেও ঠিকানাটা নিল সে। সাজ্জাদ তার দুলাভাই। এই লোকটাকে শাহিন তাকে দেখতে পারে না। এই লোকের দেয়া চাকরী সে করবে না। বাসার সবাই অবশ্য দুলাভাই বলতে অজ্ঞান। কারন প্রতি মাসে কিছু না কিছু গিফট সে পাঠাবেই, সবার জন্যই। সবাইকেই হাতে রেখেছে সে, শাহিন সেটা বোঝে। সকালের নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়ল। মনটা খারাপ তার।
দুই
বাসা থেকে বের হয়ে মোড়ের দোকানে ঢুকল নাস্তা করতে। খিদেয় পেট চো চো করছে। পরাটা, নেহারী, মিষ্টি দিয়ে নাস্তা সারল শাহিন। বিল যথারীতি বাবার খাতায়। আপার বাসায় পৌছাতে পৌছাতে বেলা ১২ টা বেজে গেল। আপার ওখানে গেলে তার সময় খুব ভাল কাটে। বাসায় ঢুকলেই মনটা ভাল হয়ে যায়। প্রাচুর্যের বিশাল একটা শক্তি আছে যা মন কেও ভাল করে ফেলে। আপা অবশ্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব খবর নেন। আর একটা কাজ হয়, আপা কিছু না কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দেন। বেকার ছেলেদের কাছে সেটাই যেন অমূল্য ধন। বড় আপা আজ দিলেন ১০০০ টাকা; বললেন, “তোর শার্টের এ অবস্থা কেন? নতুন শার্ট কিনে নিবি। নে টাকাটা রাখ, তোর দুলাভাইয়ের অনেক টাকা”। যাক আজকে তাহলে নিলার সাথে দেখা করা যাবে। আপার বাসা থেকেই নিলাকে ফোন দিল। নিলার কথা সময় মত বলা হবে। আপার বাসায় গেলে আপা না খাইয়ে ছাড়েন না, আজও তার ব্যতিক্রম হল না। আপার বাসা থেকে বেরিয়ে আর কোন কাজ খুজে পাচ্ছিল না শাহিন। নিলা আসবে বলল ৫টায়, এখন মাত্র ৩টা বাজে। শাহিন ভাবল অনেকদিন পর বাধ্য প্রেমিক এর মত সে ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে নিলার জন্য অপেক্ষা করবে। হাতে কাজও নেই আর নিলার প্রতিদিনের মত দেরী করে আসো কেন এই টাইপ কথা শুনতে হবে না। যেই ভাবা সেই কাজ, শুরু হল শাহিনের অপেক্ষার প্রহর…
[চলবে…]
You must be logged in to post a comment.